সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার:
কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শত শত লোক ভোটার হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ৯ আগষ্ট সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে হালনাগাদ ভোটার কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেকে। ভোটার ফরমে ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধনের নম্বর সম্বলিত কলাম থাকায় অনেক দৌড়াদৌড়ি করেও ভোটার হতে পারছেন না। এদিকে তীব্র ফরম সংকট এবং তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ী বাড়ী গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ না করায় অনেকেই হালনাগাদ ভোটার কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিতও নন। সচেতনরা হালনাগাদ ভোটার কার্যক্রমের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোটার হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহকারীদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও ফরম ছাড়া ফিরে আসতে বাধ্য হন। তাদেরকে জানানো হচ্ছে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে চাহিদা পরিমাণ ভোটার ফরম তাদেরকে সরবরাহ না করায় তারা ভোটারদের ফরম দিতে পারছেন না। ২০০সালের ১ জানুয়ারীর অথবা তার পূর্বে যারা জন্ম গ্রহণ করেছেন অথবা যাদের বয়স ১৬ বছর পূর্ণ হয়েছে তারাই কেবল হালনাগাদ ভোটার তালিকায় না অর্ন্তভূক্তির সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে ভোটার ইচ্ছুকদের প্রচূর মূল্যবান সময় অপচয় হয়েছে। ভোটারের পিতা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াও চাচা/ফুফু/ভাই/বোন থেকে তিন জনের জাতীয় পরিচয় পত্র সংযুক্ত করতে হচ্ছে নির্ধারিত ফরমের সাথে। এছাড়াও ভোটারের পিতা বা দাদার নাম আছে এমন জমির দলিল বা খতিয়ান ও দিতে হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে রক্তের গ্র“প প্রমাণপত্র।
বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, শত শত লোক এখনো ফরম পূরণ করার সুযোগ পাননি। কেবল তারা হতাশ হয়ে বাড়ী ফিরছেন। এদিকে ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মিলাথোইন রাখাইন টেকনাফ সদর ইউনিয়নে বদলী হওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ৪/৫দিন আগে ঈদগাঁও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ডিজিটাল জন্ম সনদ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিষদে বর্তমানে অতিরিক্ত দায়িত্বে জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ছৈয়দ আলম নামের যে সচিব রয়েছেন তিনি জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখায় আবেদন করেছেন জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য। কিন্তু এরিপোর্ট লিখার দিন পর্যন্ত উক্ত ইউনিয়নে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম উম্মুক্ত করা হয়নি বলে জানান ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা এম.ছরওয়ার।
উত্তর মাইজপাড়ার কলেজ পড়–য়া ছাত্রী শাকিলা শাবনুর আইরিন জানান, ডিজিটাল জন্ম সনদ হাতে না পাওয়ায় তার ভোটার হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভাদীতলার সৌদি প্রত্যাগত বেলাল উদ্দিন জানান, তিনি বেশ কয়েকবার স্থানীয় তথ্য সংগ্রহকারী ভাদীতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিকিার নিকট গিয়েও ফরম পূরণ করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহকারী ফরম নেই বলে তাকে বিদায় করে দেন।
অন্যদিকে ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র দরগাহপাড়া নিবাসী সাজ্জাদুল ইসলাম শিপন জানায়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্বেও ফরম সংকটের কারণে তার ভোটার হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে হালনাগাদ ভোটারকে কেন্দ্র করে ঈদগাঁও বাজার ও ষ্টেশনের কতিপয় অসাধু কম্পিউটার দোকানদারদের বর্তমানে পোয়াবারো চলছে। ঐসব দোকানীরা জালিয়াত ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভোটার প্রার্থীদের সৃজিত খতিয়ান,জাতীয় পরিচয়পত্র,জন্ম সনদ পত্র, পাশের সনদ সহ স্পর্শকাতর নানা কাগজপত্র কম্পিউটার থেকে বের করে দিচ্ছে। বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রচূর পরিমাণ নগদ টাকা। মুষ্টিমেয় কয়েকজন অসাধূ ব্যবসায়ীর জন্য স্থানীয় পুরো কম্পিউটার জগৎ কালিমালিত্ব হয়ে পড়ছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মিজবাহ উদ্দিন চলমান ভোটার কার্যক্রম নিয়ে জানান, নকল যে সমস্ত কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট দেয়া হয়েছে তা যাচাই বাছাইয়ের সময় বাতিল হয়ে যাবে। বিশেষ করে যারা কম্পিউটার ভূঁয়া জন্ম সনদ তৈরি করেছেন কেন্দ্রীয় সার্ভার খুললেই তাদের জন্ম নিবন্ধন নম্বর ধরা পড়ে যাবে। এতে সবচেয়ে বেশি প্রতারিত ও তিগ্রস্ত হবেন ভোটার প্রার্থীরা। তাই তিনি এ ব্যাপারে সকলকে সজাগ ও সচেতন থাকতে অনুরোধ করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নির্ধারিত সময় শেষ হলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ডকুমেন্ট প্রদর্শন সােেপ জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে যে কোন সময় যে কেউ ভোটার হবার সুযোগ পাবেন। হালনাগাদের নির্ধারিত যে সময় সীমা তা গ্রামাঞ্চলের অশিতি ও অসচেতন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্বাচন কমিশন সাব্যস্ত করেছেন বলে জানান তিনি।
পাঠকের মতামত